নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশালে সরকারি মাধ্যমিক স্কুলগুলোয় শিক্ষক সংকট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) হিসাবেই বরিশাল বিভাগের ২২টি স্কুলে গড়ে ৩৮ ভাগ শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে। মাত্র ৪টি স্কুলে প্রধান শিক্ষক রয়েছেন, বাকি ১৮টিই চলছে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক দিয়ে। সংকট নিরসনে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে শিক্ষক নিয়োগে সার্কুলার জারির পর ইতোমধ্যেই দুই বছরের বেশি পার হয়েছে। কিছু দিন আগে মাত্র মৌখিক পরীক্ষা শেষ হল। নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে। কবে নাগাদ এই নিয়োগপক্রিয়া শেষ হবে, তা চূড়ান্ত নয় আজও। তবে ইতোমধ্যে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিক্ষক পদে চাকরিপ্রার্থী ৩৭ ও ৩৮তম বিসিএসে ক্যাডার ও নন ক্যাডার পদে নিয়োগ পেয়ে গেছেন। জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ২০১৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন সাত হাজারের বেশি। এর আগে সর্বশেষ শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছিল ২০১১ সালে। এরপর থেকে বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে স্কুলগুলোয় শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হচ্ছিল। তবে বিষয়ভিত্তিক পর্যাপ্ত শিক্ষক মিলছিল না।
তাছাড়া বিসিএসের নন-ক্যাডার থেকে যারা শিক্ষক পদে নিয়োগ পেয়ে আসছিলেন, তাদের বেশির ভাগই পরে অন্য চাকরিতে চলে যাচ্ছিলেন। ফলে শিক্ষক সংকট চলছিলই। সবশেষ লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চাকরিপ্রত্যাশীরা জানান, ৭ হাজার ১৬১ জন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও অনেকেই অন্য চাকরি পেয়ে গেছেন। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি জুলাই পর্যন্ত ৩৭তম বিসিএসের নন-ক্যাডার দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১ হাজার ৩৬৫ জন এবং ৩৮তম বিসিএসে ২ হাজার ২০৪ জন নিয়োগ পেয়েছেন। এছাড়াও ৪ জানুয়ারি ৪০তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। চাকরি প্রার্থীরা বলছেন, শিক্ষকের যে সংকট চলছে, তাতে শূন্যপদ পূরণে অপেক্ষমাণ তালিকা করা জরুরি। তাহলে অপেক্ষমাণ তালিকা থাকলে কোনো পদ আর শূন্য পড়ে থাকবে না। জানা যায়, ১ হাজার ৩৭৮টি পদের বিপরীতে লিখিত পরীক্ষায় পাস করেছেন ৭ হাজার ১৬১ জন।
পরে পদ বাড়িয়ে ১ হাজার ৯৯৯টি করা হয়। সরকারি হাইস্কুলের মৌখিক পরীক্ষার প্রার্থী ঢাবি ছাত্র কামাল হোসাইন বলেন, ২০১৮ সালের সার্কুলার হওয়ার পর আজও নিয়োগ পক্রিয়া শেষ হয়নি। নিয়োগে এ বিলম্বে সংকট লেগেই আছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) বরিশাল আঞ্চলিক পরিচালক অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বরিশাল বিভাগের ২২টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট ভয়াবহ। আমাদের হিসাবে স্কুলগুলোয় গড়ে ৩৮ ভাগ শিক্ষক নেই। তবে বরিশাল নগরীর দুটি স্কুল বাদ দিলে এ হার দাঁড়াবে ৫০ শতাংশ। তিনি জানান, চলতি সপ্তাহে মাউশির পরিচালককে (মাধ্যমিক) এ বিষয়ে লিখিত তথ্য দেয়া হয়। দীর্ঘদিন শিক্ষক নিয়োগ এবং পদোন্নতি বন্ধ থাকায় এ জট সৃষ্টি হয়েছে বলে প্রফেসর মোয়াজ্জেম হোসেন উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, প্রত্যন্ত এলাকা বিশেষ করে ভোলার দৌলতখান, পিরোজপুরের কাউখালী এবং বরগুনার বিদ্যালয়গুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। বরগুনা সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আজহারুল হক জানান, ৫২ জন শিক্ষক পদের বিপরীতে আছেন মাত্র ১৫ জন। মাত্র ১৫ জন শিক্ষক দুই শিফটে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থীকে পাঠদান অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বরগুনা সরকারি বালক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাহমুদ চৌধুরী জানান, তার প্রতিষ্ঠানে ৫১ শিক্ষক পদের বিপরীতে আছেন মাত্র ২২ জন। শহীদ আরজুমনি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র লিয়ন জানায়, তাদের স্কুলে শিক্ষক সংকট চরম। একেকটি বিষয়ে শিক্ষক থাকার কথা ২/৩ জন, শিক্ষক আছেন মাত্র ১ জন করে। যে কোনো মূল্যে শিক্ষার্থীরা এই শিক্ষক সংকট দূর করার জন্য সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে।
বরিশাল শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পাপিয়া জেসমিন বলেন, শিক্ষক সংকট রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নির্মিত ৭ স্কুলেই সহকারী প্রধান শিক্ষক দেয়া হয়নি। যার কারণে কাজকর্মে ব্যাপক বেগ পেতে হচ্ছে। এজন্য ডিজি ও ডিডিকে চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। মাউশির মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ গোলাম ফারুক বলেন, ‘ভাইবা পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে। এই দুই হাজার নিয়োগ দিলে আমাদের কোঠা পূরণ হয়ে যাবে। শুধু লিখিত পরীক্ষা নয়, মৌখিক ও লিখিত পরীক্ষার সমন্বয়ে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। আর এতে সংকট কমে যাবে।’ এ ব্যাপারে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) স্কুলের শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, এখন ১৯৯৯ জন নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। আর এই সময়ে আরও কিছু পদ খালি হতে পারে। এসব পদে সরকার জনবল দিতে চাইলে বর্তমান নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকেই দেয়া যাবে। আমরা এই করোনাকালেও চ্যালেঞ্জ নিয়ে এই নিয়োগের কাজটি করেছি; যেন শিক্ষক সংকট লাঘব হয় এবং কর্মসংস্থানের সংখ্যা বাড়ে। (সূত্রঃ যুগান্তর)
Leave a Reply